আমের মুকুল |
আম বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় এবং অর্থকরী ফল। স্বাদ গন্ধ পুষ্টিমান ও ব্যবহার বৈচিত্রের ভিন্নতায় আমকে ফলের রাজা বলা হয়। কাঁচা আম থেকে আমের চাটনি, আম চোর, মোরব্বা জাতীয় খাদ্য দ্রব্য প্রস্তুত করা হয় তাছাড়া পাকা আম থেকে আমের জেলি, মন্ড, কেচাপ, পাউডার, আমসত্ত্ব প্রকৃতি খাদ্য প্রস্তুত করা হয়। আম বাংলাদেশের সব জেলাতেই চাষ করা যায় বাংলাদেশ আমের জন্য বিখ্যাত রাজশাহী জেলা। বাংলাদেশের অসংখ্য প্রজাতির আম পাওয়া যায়।
আম বর্তমানে বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। এটি একটি অর্থকারী এবং লাভজনক ফল। আম চাষে তেমন একটা প্রতিবন্ধকতা না থাকলেও আম চাষে সবচাইতে বড় একটি সমস্যা হচ্ছে আমের মুকুল নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং আমের বোটা পচা রোগ। তবে প্রধান সমস্যা হচ্ছে আমের মুকুল ঝরে যাওয়া।
আসুন প্রথমে জেনে নেই আমের মুকুল ঝরে যাওয়ার প্রধান কারণ গুলোঃ
আমের মুকুল বলতে সাধারণত আমের ফুলগুলোকে একত্রে মুকুল বলা হয়। একটি মুকুলে অনেক আমের ফুল থাকে। পুরুষ ফুল এবং স্ত্রী ফুল একসাথে থাকে এবং পরাগায়নের মাধ্যমে আমের গুটি জন্ম নেয়।
- প্রাকৃতিক কারণে আমের মুকুল ঝরে পড়তে পারে যেমন ঝড়-বৃষ্টি শিলাবৃষ্টি ইত্যাদি কারণে।
- মাটিতে রসের অভাব হলে মুকুল ঝরে পড়তে পারে।
-হপার পোকার আক্রমণ মুকুল ঝড়ে পরার একটি অন্যতম কারন। একটা হপার পোকা প্রায় ১৫০টা ডিম পাড়তে পারে। এই ডিম গুলা পরে ৫-৭ দিনের মাথায় ডিম ফুটে নিম্ফ হয় এবং এই ডিম গুলো পরে আম গাছের পাতা, ফুল, ফলের রস শুষে খায় তখন এক ধরণের রস নিঃসরণ করে যাকে ”হানি ডিউ” বলে। এই আঠালো একটা পদার্থের জন্য আম গাছে শুটি মোল্ড নামে এক ধরণের ছত্রাক জন্মায় ফলে সম্পূর্ণ গাছের পাতা, মুকুল কালো হয়ে যায়। তখন বলা হয় মহালাগা।
- অ্যানথ্রাকনোজ রোগ আমের মুকুলে হয়ে থাকে। এটি কোলিটোট্রিকাম গোলেসপোরিওডিস (Colletotrichum gloeosporioides) নামক এক প্রকার ছত্রাক দ্বারা হয়ে থাকে। এই রোগের ফলেও আমের মুকুল ঝড়ে পড়ে।
-পাউডারী মিলডিউ ওডিয়াম মেংগিফেরা (Oidium mangiferae) নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে। এ রোগের কারণে আক্রান্ত অংশে সাদা পাউডারে আমের মুকুল ঢেকে যায় ও আমের মুকুল ঝড়ে যায়। এখন আমাদের যেই বিষয়টা লক্ষ্য রাখতে হবে আমের মুকুল আসা ও ফল ধরার সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আমের মুকুল ঝরে পড়া রোধে করণীয়
- আম বাগান পরিষ্কার রাখা আম গাছের নিচে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা যেন ক্ষতিকর পোকামাকড় খাওয়াতে না পারে। আমের মরা ডালপালা ভেঙে ফেলতে হবে। রোগাক্রান্ত ডাল-পাতা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
- আমের মুকুল আসার আগে থেকেই গাছে প্রচুর পরিমাণে পানি দিতে হবে সাধারণত শীতের পড়ে গরমে শুরুর দিকে আম গাছের প্রচুর পানি প্রয়োজন হয়। আম গাছের গোড়ায় সঠিকভাবে পানি পাচ্ছে কিনা সেটি লক্ষ্য রাখতে হবে।
-ফুল থেকে যখন ফল মটর দানার মতো হবে তখন একটা স্প্রে করতে হবে হপার পোকা দমনের জন্য। সাধারণত মুকুল আসার আগে হপার পোকার জন্য স্প্রে করতে হয়।হপার পোকার জন্য ডায়াজিনন ৬০ ইসি বা লেবাসিড ৫০ ইসি চা চামচের ৪ চামচ ৮.৫ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর দুই বার স্প্রে করতে হবে। অথবা ম্যালাথিয়ন বা এমএসটি ৫৭ ইসি উপরোক্ত মাত্রায় স্প্রে করতে হবে।এছাড়া সাইপারমেথ্রিন১০ ইসি(সিমবাস বা রিপকর্ড)@ ২মিলি./১লি. স্প্রে করা যেতে পারে।
-আমটা যখন গুটি আকার ধারণ করবে তখন ১০-২০ দিন পর পর বোরিক এসিড@৬ গ্রাম/১০ লি. পানি স্প্রে করলে আমের গুটির পরিমাণ বেড়ে যাবে।
- সালফার জাতীয় কীটনাশক আমের গুটিতে স্প্রে করতে হবে যাতে ছত্রাক আক্রান্ত না করতে পারে।অথবা ম্যানক্রোজেন ২ গ্রাম/লি. নামক ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। ব্যাভিসটিন WP ০.২ % হারে অথবা ডাইথেন-এম ০.৩ % হারে দুই বার ফুল ধরার আগে ও পরে স্প্রে করতে হবে।
- পাউডারী মিলডিউ রোগ দমনে থিয়োভিট ০.৩ % হারে ফুল ফোটার পূর্বে এক বার ও পরে দুই বার স্প্রে করতে হবে। ম্যালাথিয়ন ০.২ % হারে ফুল ফোটার পর একবার ও গুটি আসার পর ১৫ দিন পর পর দুই বার স্প্রে করতে হবে।
- আম যখন মারবেলের মতো ছোট ফল হবে তখন ইউরিয়া সার @২০ গ্রাম/লি. স্প্রে করতে হবে।
-আম গাছের পাশে মৌমাছি পালন করতে হবে প্রাকৃতিক পরাগায়নের জন্য। এছাড়া আম বাগানে বিভিন্ন জাতের আম গাছ লাগানোর করতে হবে এবং পাশাপাশি বিভিন্ন ফুল গাছ লাগাতে হবে যাতে বিভিন্ন পোকামাকড় পরপরাগায়নে সহযোগিতা করে।
অনেকেই এই ভুলটি করে থাকেন মুকুল ফোটার সাথে সাথে গাছে কিটনাশক স্প্রে করে থাকেন। কিন্তু যে বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে সেটি হল গাছে যখন ৫০% ফল ধরবে তখন কোনো প্রকার স্প্রে করা যাবে না। আম গাছে মুকুল আসার আগে স্প্রে করা যেমন জরুরি না,তেমনি মুকুল ফোটার পর স্প্রে করার জরুরি নয়। কেননা এই সময় অনেক উপকারী পোকারা পরাগায়নের জন্য আসে।
তথ্যসূত্রঃ বাউ-জার্মপাজম সেন্টার, বাকৃবি
0 Response to "আমের মুকুল ঝরে যাওয়ার কারণ ও প্রতিকার"
Post a Comment