বাংলাদেশের আকাশে হিজরি ১৪৪০ সনের পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেছে। আগামীকাল মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে প্রথম রোজা । ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
আজ এশার নামাজের পর মসজিদে মসজিদে তারাবিহর নামাজ পড়বেন মুসল্লিরা। আজ সোমবার দিবাগত শেষরাতে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা সাহরি করবেন।
টপএক্সপার্টবিডি এর পক্ষ থেকে সাবাইকে পবিত্র রমজানের শুভেচ্ছা
পবিত্র রমজানের আমল সমূহ
রমজান আরবি শব্দ রামদুন থেকে উৎপত্তি।যার অর্থ পুড়িয়ে ফেলা,নিঃশেষ করে ফেলা ।যা মানুষের সমস্ত পাপ,রিপুগুলোকে,জালিয়ে দেয়।এই রমজান মাস মানুষ কে লক্ষে এবং আত্মিক,নৈতিক,ও চারিএিক কল্যাণের ধারক বাহক বানানো নিমিত্তে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলা আমীন রমজানে রোজাকে উম্মতের উপর ফরজ করে দিয়েছেন।
আল্লাহ রাব্বুল আল-আমীন সুরা বাকারা ১৮৩ আয়াতে বলেন: হে ইমান্দারগন!তোমাদের জন্য সিয়াম বিধান দেওয়া হল যেমন বিধান পূর্ববর্তীদের দেয়া হয়েছিল।যাতে তোমার তাওক্য়া অর্জন করতে সক্ষম হও।
আল্লাহ রাবুল আল-আমীন আরও বলেন এরশাদ সুরা বাকারা ১৮৫ আয়াতে: রমজান মাস এতে মানুষের হেদায়েত এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন সত্য ও অসত্যর পার্থক্য কারীরুপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে।সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে তারা যেন এ মাসে রোজা রাখে।
রমজান পুণ্য অর্জনের যে অবারিত ধারিত ধারা প্রবাহিত তা অনন্যা মাস থেকে অধিক।
এ প্রসঙ্গে রাসুল (সঃ)বলেন ‘হে সকল একটি মহান ও বরকতময় মাস তোমাদের সামনে উপস্থিত।এ মাসের রাএগুলোর মধ্যে এমন এক রাত বিদ্যমান,যার মর্যাদা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।আল্লাহ তায়ালা এ মাসে রোজাকে ফরজ করেছেন এবং এ মাসের রাএি জাগরণ করেছেন অতিরিক্ত ইবাদত সামিল।তিনি আরও বলেন যে ব্যত্তি এ মাসে একটি সাধারণ ভালো কাজ করবে অন্য মাসের তুলনায় তাকে একটি ফরজ ইবাদতের সওয়াব প্রদান করা হবে।
রাসুল (সঃ)আরও বলেন যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ ইবাদত পালন করবে, তাকে ৭০টি ফরজ ইবাদতের সওয়াব প্রদান করা হবে।
এভাবে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা আল্লাহ ইবাদতে অতিবাহিত হয় বলে এ মাস কে আল্লাহ মাস বলা হয়।কাজেই এ মাসে কি কি আমল করলে পরকাল ও ইহকালে মুক্তি মিলবে তা আলোচনা করা হল নিম্নে।
(১) সালাত
শুধু রোজা নয়, সালাত ব্যতীত কোন আমল কবুল হবে না। আল্লাহ রাব্বুল আলা-মিন বলেন:
‘তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বি-শুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠ-ভাবে তাঁর ইবাদত করতে এবং সালাত কায়েম করতে ও জাকাত দিতে, এটাই সঠিক দ্বীন’। সূরা আল-বাইয়্যিনাহ আয়াত ৫
সালাতকে রোজা মাসে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ)বলছেন: যে রমজান মাসে ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে সিয়াম পালন করবে তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। বর্ণনায় : বোখারি ও মুসলিম।
এখানে ইহতিসাব শব্দ এসেছে। এর অর্থ এখালাসের সাথে সিয়াম পালন করতে হবে। আল্লাহর আস্তা ও বিশ্বাস অর্জন ও তার কাছ থেকে প্রতিদানের আশা করার নাম হল ইহতিসাব।এর মধ্যে তারাবীর নামাজ ও তাহাজ্জুদের নামাজ অন্তর্ভুক্ত।
রমজান মাসে তারাবীর নামাজ জামাততে সাথে আদায় করলে আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে পুন রাতে নামাজ পড়া সওয়াব দেন। রাসুল (সঃ) ‘যে ব্যক্তি ইমামের সাথে নামাজ পড়ে এবং তার নামাজ শেষ করা পর্যন্ত তার সঙে থাকে, সেই ব্যক্তির জন্য সারা রাএি কিয়াম করা সওয়াম দেওয়া হয়’।
এ মাসে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় খুব সহজ; কারণ ওই সময় আমাদের সেহরি খেতে উঠতেই হয়।সেহেরির সময় কয়েক রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে নেয়ার কথা হাদিসে আছে।
(২)সুন্নত অনুসরণ
রোজা মাসে যে কোন আমল আল্লাহর রাসূলের নির্দেশিত পদ্ধতিতে আদায় করতে হবে। তা না হলে তা আল্লাহর দরবার থেকে প্রত্যাখ্যাত হবে।বিশেষ করে রমজান মাসে তারাবীর নামায পড়া কে সুন্নত সাব্যস্ত করেছন।যে সব কাজ রোজার লক্ষ্য পরিপন্থী রোজা থাকা অবস্থায় সেসব কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য রাসুল (সঃ)জোর তাকিদ করেছেন।রোজা মাস হল আল্লাহর মাস।তাই রমজান মাসের কোন আমল আল্লাহ কাছে গ্রহণযোগ্য করা জন্য আল্লাহ সন্তুষ্টি এবং আল্লাহর রাসূলের নির্দেশিত পদ্ধতিতে সম্পাদন করতে হবে।
(৩)আল-কোরআন তিলাওয়াত
রমজানের বিশেষ মাহাত্ম্যের কারণ কি?এ বিশেষত্ন্যে্র মুল কারণ আল কোরআন।আল্লাহ তায়ালা তার বিশেষ বাণী পবিএ কোরআন এই রমজান মাসে অবতীর্ণ করেছেন আল্লাহ তায়ালা বলেন সুরা বাকারা ১৮৫ আয়াতে:
‘রমজান মাস এতে মানুষের হেদায়াত এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন সত্য ও অসত্যর পার্থক্য কারীরুপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে।সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে তারা যেন এ মাসে রোজা রাখে’। পবিএ কোরআন যদিও সমগ্র মানব জাতি জন্য অবতীর্ণ হয়েছে কিন্তু শুধু মুত্তাকিন ব্যক্তিরা এর থেকে প্রকৃত উপকার লাভ করবেন। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন সুরা বাকারা ২ আয়েতে বলেন: ‘এটি একটি কিতাব।এতে কোন সন্দেহ নেই,মুত্তাকিন জন্য হিদায়ত’। রমজান মাসে প্রত্যেক রাএে জিবরাইল (আঃ)রাসুলুল্লাহ (সঃ)এর সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং তাকে কোরআন পাঠ করাতেন।
হযরত ফাতিমা (রা:)বলেন ‘আব্বা বলেছেন যে জিবরাঈল (আঃ) প্রত্যেক বছর এক বার করে তার উপর কোরআন পেশ করতেন (পড়ে শোনাতেন)।কিন্তু তার ইন্তেকালের পর বছরে দুইবার কোরআন পেশ করতেন’।(বোখারি ১০৮৮পৃ)
এ হাদিস থেকে বোঝা যে রমজান মাসে কোরআন পাঠন উদ্দেশ্য জমায়েত হওয়া এবং বড় হাফেজ ও ক্বারি কাছে কোরআন পেশ করা মোস্তাহাব।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন, রোযা এবং কুরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোযা বলবে, আমি তাকে দিনের বেলায় পানাহার ও প্রবৃত্তির চাহিদা মেটানো থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। কুরআন বলবে, আমি তাকে রাতে ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং আমার সুপারিশ কবুল করুন। তখন দু’জনের সুপারিশই গ্রহণ করা হবে।
কোরআন তেলাওয়াত সময় কোরআনের অর্থ,আদেশ,নিষেধ,অনুধাবন করে পড়তে হবে।এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা সুরা ছোয়াদ ২৯ আয়াতে বলেন ‘এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি বরকত হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াত সূমুহ লক্ষ্য করে এবং বুদ্ধিমানগণ যেন তা অনুধাবন করে’।
(৪)ই’তেকাফ
রমজানের মাসের শেষ দশদিন ই’তেকাফ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ।
আবু হুরাইরা (রা:)বলেন রাসুলল্লাহ(সঃ)প্রত্যেক রমজানে ১০ দিন ই’তেকাফ করতেন।কিন্তু তার ইন্তেকালের বছরে তিনি ২০দিন ই’তেকাফ করেন।(বোখারী২০৪৪)
হযরত আয়েশা(রা:)থেকে বর্ণিত যে রাসুলল্লাহ(সঃ)প্রত্যেক রমজানে ই’তেকাফ করতেন।ফজররে নামাজ পড়ে তিনি ই’তেকাফে প্রবেশ করতেন।
ই’তেকাফ প্রসঙ্গে ইমাম যুহরি বলেন, আশ্চর্যজনক হল মুসলমানরা ই’তেকাফ পরিত্যাগ করে অথচ রাসূলুল্লাহ (সঃ)মদিনায় আসার পর থেকে ইন্তেকাল পর্যন্ত কখনো ই’তেকাফ পরিত্যাগ করেননি।
ই’তেকাফ কারি ব্যক্তিকে দুই হজ্জ ও দুই ওমরার সওয়াব দেয়া হবে।(বায়হাকি)
(৫)শবেক্বদরের অন্বেষণ
রমজান মাসের মধ্যে সবোত্তম একটি রাত হচ্ছে লাইলাতুল ক্বদর।এই রাত কোন তারিখে এটা নিয়ে মুফাসিরের কোরআন ও ওলামা দের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।রমজান মাসের শেষ দশদিনের বিজোড় রাএিতে শবক্বদরের তালাশ করতেন।রাসুলল্লাহ(সঃ)শেষ সাত রাএি উপর গুরুত্ব আরোপ করছেন।
আল্লাহ তায়ালা এই রাএিতে পবিএ কোরআন শরীফ নাযিল করেন।সেই রাতের ফজিলত ও বরকত বর্ণনা করা জন্য সুরা কদর অবতীর্ণ করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন। ‘আমি একে নাযিল করেছি শবেকদরে।শবকদর সম্বন্ধে আপনি কি জানেন ?।শবে-কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। এটা নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।( সুরা কদর )
এই রাএের মর্যাদা অন্য রাএি চেয়ে ৩০,০০০ গুন বেশি।এই রাএে এক রাকাত নামাজ অন্যান্য রাএে চেয়ে ৩০,০০০ গুন বেশি।কোন ব্যক্তি এই রাএে ইবাদত করলে সে যেন ৮৩ বছর অপেক্ষায় বেশি ইবাদত করল।শবক্বদর রাএে ফেরেশতা-গন আল্লাহ তায়ালা রহমত নিয়ে দুনিয়াতে আগমন করেন এবং তা এবাদত-কারী নেক বান্দাদের মাঝে বিতরণ করেন।এবং ঐ রাএে প্রভাত পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা রহমত ও বরকত পৃথিবীতে বিরাজ করে। এবং ইবাদত কারী মুমিন বান্দা গন জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাত পেয়ে থাকেন।
রাসুলল্লাহ(সঃ)বলেন ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার রাতসমুহকে ক্বদরের রাত দ্বারা সৌন্দযমন্ডিত করেছেন।
অন্য হাদিসে রাসুলল্লাহ(সঃ)বলেন ‘যে ব্যক্তি ক্বদর রাএি পেল(ইবাদত মাধ্যমে আল্লাহ সন্তুষ্টি লাভের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করবে)আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিন তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিবেন'।
অন্য হাদিসে রাসুলল্লাহ(সঃ)বলেন ‘যে ব্যক্তি পূর্ণ বিশ্বাস ও ই’তেকাফের সাথে ক্বদর রাএে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে ইবাদত করবে আল্লাহ তায়ালা তার জীবনের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন'।
(৬) দান বা সদকা
রমজান মাসে দান বা সদকা করা মুসলমানদের অবশ্যই কর্তব্য।রাসুলল্লাহ(সঃ) রমজান মাসে দান খায়রাত বেশি করতেন।
রাসুলল্লাহ(সঃ) সমস্ত মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল ছিলেন। রমজানে যখন তিনি জিবরীলের সাথে সাক্ষাৎ করতেন আরও বেশি দানশীল হয়ে যেতেন। (বুখারী ,মুসলিম)
রাসুলল্লাহ(সঃ)বলেন ‘যে ব্যক্তি (তার)বৈধ উপায়ে উপার্জিত অর্থ থেকে একটি খেজুর দান করে।আর আল্লাহ তায়ালা তো বৈধ অর্থ ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ ক্রেন না।সে ব্যক্তির ঐ দান আল্লাহ তায়ালা ডান হাতে গ্রহণ করেন।অতঃপর ঐ ব্যক্তির দানকে এমন লালন পালন করেন যেমন তোমারা একটি অশ্ব শাবক যে ভাবে লালন পালন করে থাকও।পরিশেষে তা পাহাড় সমান হয়ে যায়’।
(৭)রোজাদারদের ইফতার করানো
রমজান মাসে আল্লাহ তায়ালা মুমিন বান্দাদের রিজিক বৃদ্ধি করেন।
রাসুলল্লাহ(সঃ)বলেন ‘কেউ যদি রোজাদার বান্দাকে ইফতার করায় আল্লাহ তায়ালা তার পাপ রাশি ক্ষমা করেন দেন।তাকে দোজখ থেকে মুক্তি দেন।এবং রোজাদার সমান সওয়াব দান করেন’।ঐ সময় সাহাবারা জানতে চাইলেন আল্লাহর রাসুলল্লাহ(সঃ)আমাদের তো অনেকেরই একজন রোজাদারকে ইফতার করাতেই সক্ষম নই। রাসুলল্লাহ(সঃ)বলেন এর জন্য বিশেষ আয়োজন দরকার নেই।সামান্য দুধ,একটি খেজুর বা পানি দিয়ে ইফতার করালে আল্লাহ তায়ালা সমান সওয়াব দিবেন।
(৮)দোয়া
রোজাদার বান্দা দোয়া আল্লাহ তায়ালা গ্রহণযোগ্য হয় সবচেয়ে বেশি।বিশেষ করে ইফতারের মুহুত।ঐ সময় আল্লাহ তায়ালা জন্য ধৈর্য ধারণের চরম মুহুত।আযানের পরের সময়টাও দোয়া কবুলের সময়।
(৯)উমরাহ
রাসুলল্লাহ(সঃ)বলেন ‘রমজান মাসের উমরাহ একটি হজ্জ।ইহা আমার সাথে হজ্জ করা সমতুল্য।
সহীহ বুখারী, হাদীসনং১৬৯০
আমরা যেন সব অপকম থেকে নিজেকে দুরে সরিয়ে রাখি এবং উত্তম কমগুলো পালনে সচেষ্ট হই।আমাদের রোজা যেন কেবল আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের জন্য। আল্লাহ আমাদের রমজানের সব আমল পালনের শক্তি দান করুন।
0 Response to "আগামীকাল মঙ্গলবার পবিত্র রমজান মাসের প্রথম রোজা । পবিত্র রমজানের আমল সমূহ ।"
Post a Comment