নববর্ষ উদযাপন একটি ঐতিহাসিক সংস্কৃতি। কৃষি নির্ভর বাঙালি জাতির বাংলা নববর্ষের সূচনা হয়েছিল কৃষি সংস্কৃতিকে ভিত্তি করে। তাই নববর্ষ পালিত হওয়া উচিত নিজস্ব কৃষি সংস্কৃতিতে।আদৌ তা হচ্ছে কী না? এর উত্তর কারো অজানা নয়। বাংলা নববর্ষের সূচনা হয়েছিল মুসলমানদের হাতে।মুসলিম ঐতিহ্যের হিজরি সনকে ভিত্ত করেই বাংলা সনের উৎপত্তি হয়েছে।মুঘল সম্রাট আকবর বাংলার কৃষকদের সুবিদার্থে হিজরি সনকে ভিত্তি করে বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। সম্রাট আকবর আমীর ফতেউল্লাহ সিরাজীর পরামর্শে হিজরি ৯৬৩ সনকে বাংলা ৯৬৩ সন ধরে বাংলা সন গণনার নির্দেশ দেন। প্রকৃত পক্ষে বাংলা নববর্ষ উৎসবের মূলে আছে মুসলিম ঐতিহ্য। মুসলিম ঐতিহ্যের ভিত্তিতে বাংলা নববর্ষ চালু হয়ে, মুসলমানদের উদারতার কারণে তা সার্বজনীন অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।কিন্তু বাঙালি মুসলিম সমাজের অজ্ঞাতা,অদূরদর্শিতা, সংস্কৃতিবিমুখতার কারণে মুসলিম ঐতিহ্যের বাংলা নববর্ষ উৎসব আজ ব্রাহ্মণ সংস্কৃতির অন্তরালে ঢাকা পড়েছে।দেশজ সংস্কৃতি আজ প্রতিবেশী দেশের ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সংস্কৃতির সাথে মিশে গেছে।যা আমাদের জাতীয় সংস্কৃতিকে দুর্বল ও অপদস্থ করছে। আর অন্যদিকে বিশ্বায়নের ফলে আধুনিক যুগের বাংলা নববর্ষ উদযাপনের চাকচিক্য বাড়লেও এতে প্রাণের স্পর্শ পাওয়া যায় না। আধুনিক যুগের শহুরে মানুষের প্রাণহীন জমকালো বর্ষবরণের কৃত্রিমতায় নিবীঢ় পল্লীর প্রীতিপূর্ণ,গর্বের গ্রামীণ কৃষি সংস্কৃতি আজ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অথচ সংস্কৃতি হলো একটি জাতির প্রাণশক্তি। ইতিহাস, ঐতিহ্যকে ভিত্তি করে জাতীয় সংস্কৃতি সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী হয়। হিন্দু, মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন ধর্ম ও ঐতিহ্যের সমন্বয়ে বাঙালি সংস্কৃতি সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী হয়েছে। ধর্মের ভিন্নতা সত্ত্বেও অভিন্ন মূল্যবোধ ও জাতীয় চেতনায় বাঙালি সংস্কৃতি সমন্বিত। তবে বিশ্বায়নের নামে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শিকার আমাদের সংস্কৃতি। অন্তঃসারশূন্য বাহ্যিক চাকচিক্যময় কুরুচিপূর্ণ আগ্রাসী অপসংস্কৃতি আমাদের যুব ও তরুণ সমাজকে বিভ্রান্ত করছে। তারা নিজস্ব সংস্কৃতি ভুলে ভিনদেশী সংস্কৃতিতে মোহচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে। তাদের অপসংস্কৃতি হতে প্রতিহত করতে না পারলে প্রাণশক্তি হারিয়ে আমাদের জাতি কালের গর্ভে তলিয়ে যাবে। আর অপসংস্কৃতি প্রতিহত করতে হলে নিজস্ব সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করতে হবে। উচ্চকিত করতে হবে মানবিক ও সম্প্রীতির বাঙালি সংস্কৃতি। বিশ্বায়নের বিভ্রান্তি থেকে নতুন প্রজন্মকে মুক্ত করতে, হতে হবে শেকড়সন্ধানী। তরুণ-যুব ও শিক্ষার্থীদের মনে জাতীয় মূল্যবোধ, সংস্কৃতি ও নৈতিকতার চেতনা জাগ্রত করতে হবে। দৃঢ়ভাবে আকড়িয়ে ধরতে হবে আমাদের জাতীয় সংস্কৃতিকে। পরিহার করতে হবে পাশ্চাত্যের অপসংস্কৃতি। তাহলেই বাংলা নববর্ষ উদযাপন সার্থক হবে।
পুনশ্চ : ধর্ম যার যার নববর্ষ উৎসব সবার।
লেখাঃ আফজাল হোসাইন
0 Response to "পহেলা বৈশাখ ও বর্তমান সংস্কৃতি ।"
Post a Comment