পদ্মা কেন নদী? ব্রহ্মপুত্র কেন নদ?

বাংলা ভাষায় যেসব অহেতুক ও বেহুদা বিতর্ক জিইয়ে রাখা আছে, এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নদী বনাম নদ বিতর্ক। জন্ম থেকেই প্রশ্নটা শুনে এসেছি, ঘাঁটাঘাঁটি করে উত্তর জানার চেষ্টা করেছি, চেষ্টা করে মাঝারি সাইজের হালকা পিংক কালারের ঘোড়ার প্রমাণ সাইজের মেরুন কালারের একটা চৌকা ডিম পেয়েছি।

এক জায়গায় দেখেছি নামের মধ্যে মেয়ে-মেয়ে গন্ধ থাকলে সেটা নদী আর ছেলে-ছেলে গন্ধ থাকলে সেটা নদ। মেয়েলি নাম বলে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, সুরমা নাকি নদী; নাম পুরুষালি বলে কপোতাক্ষ, ব্রহ্মপুত্র, আড়িয়াল খাঁ, তুরাগ, বলেশ্বর নাকি নদ। কোনটা নদী, কোনটা নদ— লৈঙ্গিক গন্ধই যদি এর মাপকাঠি হয়; তা হলে মাথাভাঙ্গা, কালিজিরা, কচা নামধারীরা কী— নদী, না নদ? বরিশাল বিভাগে ‘হিজলা’ নামে যেটি প্রবাহিত আছে, সেটিই বা কী?

কোথাও-কোথাও পড়েছি— যেগুলোর শাখা আছে, অর্থাৎ বাচ্চাকাচ্চা আছে; সেগুলো নদী আর যেগুলোর শাখা বা বাচ্চাকাচ্চা নেই, সেগুলো নদ। খুঁজে দেখলাম— যে ব্রহ্মপুত্রকে নদ বলা হয়; দিবাং, লোহিত, ধানসিঁড়ি, কামেং, রায়ডাক, জলঢাকা, তিস্তা নামে সেই ব্রহ্মপুত্রের সাতটা শাখা নদী আছে (আরো বেশি থেকে থাকতে পারে); সাত-সাতটা বাচ্চা থাকার পরও ব্রহ্মপুত্র নদই থেকে গেল, নদী আর হলো না!

নাম পুরুষালি হওয়ার কারণে ব্রহ্মপুত্রের হওয়ার কথা নদ, আবার শাখা থাকার কারণে হওয়ার কথা নদী। কারো মধ্যে উভয় লিঙ্গের বৈশিষ্ট্যই বিদ্যমান থাকলে তাকে আমরা তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজড়া বলে থাকি। ব্যাকরণপণ্ডিতদের পণ্ডিতি মোতাবেক ব্রহ্মপুত্র কি তবে হিজড়া কিছু? ব্রহ্মপুত্র কি ছাইয়া-ছাইয়া? চাইলে আরেক বিতর্কও তোলা যায়— সাত বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে ব্রহ্মপুত্র কি গর্ভবতী হয়েছিল, নাকি গর্ভবান?

আমি মনে করি— নদী আর নদ নিয়ে মাথা ঘামানো নিতান্তই নিষ্প্রয়োজন। প্রাণীদের লিঙ্গ থাকে, জল বা জলাশয়ের লিঙ্গ নেই। লিঙ্গ নিয়ে টানাটানি না করে সবগুলোকে নদী বললেই লেঠা চুকে যায়। হয়তো কোনো এক কবি কোনো এক অলস দুপুরে কোনো একটি ছড়া লিখতে গিয়ে বদ বা মদ-এর সাথে অন্ত্যমিল রাখতে গিয়ে ছন্দ মেলাতে না পেরে নদীকে নদ লিখে ফেলেছিলেন। হয়তো তিনি লিখেছিলেন— আজকে আমি মাতাল হব, আমায় দে রে মদ; মদ্য পিয়ে পি-এর তোড়ে বইয়ে দেবো নদ! তার সেই দুপুরের সেই আলস্যের খেসারত এখনও পর্যন্ত দেওয়ার দরকার আছে বলে মনে করি না
Share This

0 Response to "পদ্মা কেন নদী? ব্রহ্মপুত্র কেন নদ?"

Post a Comment

AD