জন্মঃ ১৪ই মার্চ ১৮৭৯ মৃত্যু ঃ ১৮ই এপ্রিল ১৯৫৫
বিশ্ববিখ্যাত বৈজ্ঞানিক অ্যালবার্ট আইনস্টাইন লিখেছিলেন, “মাননীয় প্রেসিডেন্ট মহােদয়,
ই, ফারমী এবং এস, জিলার্ড-এর সাম্প্রতিক গবেষণার কিছু অংশ পান্ডুলিপির আকারে আমার নিকট প্রেরণ করা হয়েছে।
এ থেকে আমি এই একটি বিশ্বাসে পৌছেছি যে, অদূর ভবিষ্যতে ইউরেনিয়াম পদার্থটিকে শক্তির একটি নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ উৎসে পরিণত করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই ধরনের একটি মাত্র বােমা কোনাে বন্দরে বিস্ফোরিত করা হলে তা সমগ্র বন্দর এবং সাথে সাথে এর আশেপাশের এলাকা সমানে ধ্বংস করে দিতে পারে ।ইংরেজী ১৯৩৯ সালের শীতকালের শুরুতে প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টকে লেখা হয়েছিলাে এই পত্রটি।
এর আরাে ছয় বছর পরে ১৯৪৫ সালের ৬ই আগষ্ট তারিখে এই ধরনের একটি মাত্র বােমা ফেলা হয়েছিলাে জাপানের ‘হিরেশিমা' শহরে।
এতে ষাট হাজার লােক নিহত হয়, এক লক্ষ লােক আহত হয় এবং দু'লক্ষ লােক গৃহহীন হয়। পারমাণবিক বােমা শহরের ছয়শত ঘরবাড়ি
বিধ্বস্ত করে দেয়। কয়েকদিন পরে 'নাগাশাকি' শহরের উপরে ঐরূপ আরাে একটি বােমা ফেলা হয়। জাপান সরকার বাধ্য হয়ে আত্মসমর্পণ করেন; দুটি বােমা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটায়।
আইনস্টাইনের ১৯০৫ সালে এক সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে পারমাণবিক বােমা প্রস্তুত করা
হয়।
সে সিদ্ধান্ত হচ্ছে এই পদার্থকে শক্তিতে রূপান্তরিত করা যায় এবং পদার্থকে সৃষ্টি বা ধ্বংস কোনােটাই করা সম্ভব ছিলা না। আইনস্টাইনের গবেষণা তাঁকে বীজগণিতের নিম্নলিখিত সহজ-সরল সমীকরণের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়—সমীকরণটি নিম্নরূপ।
E=mc2
এর অর্থ হলাে, শক্তি=ভর x আলােকের গতি x আলােকের গতি। আলােকের গতি প্রচুর প্রতি সেকেন্ডে ১,৮৬০০০ মাইল কিংবা প্রতি মিনিটে ৬০,০০০,০০০,০০০ ফুট। কাজেই সামান্য পরিমাণ পদার্থ থেকে যে শক্তি লাভ করা যায় তার পরিমাণও বিপুল। প্রকৃতপক্ষে এক পাউন্ড কয়লার মতাে পদার্থ যদি সম্পূর্ণরূপে শক্তিতে রূপান্তরিত করা যায় তাহলে তার ফলে এক হাজার কোটি কিলােওয়াট ঘন্টার বেশি শক্তি পাওয়া যাবে। এ ভাবে দেখা যায় দশ পাউন্ড পদার্থ সারা বিশ্বকে পুরাে একমাস বিদ্যুৎ সরবরাহ করে চালিয়ে নিতে পারে।
অ্যালবার্ট আইনস্টাইন ১৮৭৯ সালের ১৪ই মার্চ তারিখে জার্মানীর আলম শহরে। জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মের এক বছর পরে পরেই তাঁর পুরো পরিবার সেখানকার বাস উঠিয়ে মিউনিখের শহরতলীতে নতুন বসত করেন। অ্যালবার্টের পিতা একটি ছােট ইলেক্টা-কেমিক্যাল কারখানার মালিক ও পরিচালক ছিলেন। অ্যালবার্টের অবিবাহিত পিতৃব্য ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ট্রেনিংপ্রাপ্ত। তিনি এই কাজে সর্বদা সাহায্য করতেন এবং আইনস্টাইন পরিবারের সঙ্গে বাস করতেন। আইনস্টাইনের মাতা সঙ্গীতের দারুণ ভক্ত। ছিলেন এবং তিনি বিশেষ করে বিটোফেন পছন্দ করতেন।
সঙ্গীতের প্রতি তার এই অনুরাগের ফলে তার ছয় বছর বয়স্ক পুত্র আইনস্টাইনের জন্যেও বেহালা বাজানাে শেখানাের পাঠ শুরু হয়। প্রথম প্রথম তিনি এই বাদ্যটাকে ভালােবাসতেন না। কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি এতে মনােযােগী হন এবং দক্ষতা অর্জন করেন আর বিশেষ করে মােজার্টের রাগপ্রধান সঙ্গীতের ভীষণ অনুরাগী হয়ে ওঠেন। শৈশবের | এই সঙ্গীত শিক্ষা তিনি সারা জীবন কাজে লাগিয়েছেন। এবং জানা যায় এ থেকে ঘন্টার পর ঘন্টা বিশ্রাম ও আনন্দ উপভােগ করেছেন। | অসাধারণ প্রতিভাবান ছেলে বলতে যা বােঝায় আইনস্টাইন তার ধারে কাছেও ছিলেন না। তখন তিনি নিরেট বােকাই ছিলেন। ছেলেবেলায় তাঁর কথা ফুটতে এতাে দেরী হয়েছিলাে যে, পিতামাতার ভয় হয়েছিলাে ছেলেটা হয়তাে হাবাই হবে। ছেলেবেলা হতেই তিনি সমবয়সী ছেলেদের থেকে নিজেকে আলাদা করে রাখতেন এবং আলসেমি করে ও দিবাস্বপ্নের মধ্যে দিন কাটাতেন। তিনি বিশেষ করে কঠোর শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলতেন, পরিশ্রমসাপেক্ষ খেলা থেকে বিরত থাকতেন এবং সৈনিক চাকুরিকে বিশেষ করে ঘৃণা করতেন। মিউনিখের রাস্তায় প্রায়শঃই জার্মান সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজের দৃশ্য দেখা যেতাে। অধিকাংশ ছেলেমেয়ের জন্যই সে দৃশ্য ছিলাে বােমাঞ্চকর। কিন্তু অ্যালবার্ট কুচকাওয়াজ দেখে অস্বস্তি বােধ করতেন।
সংগ্রহ আকস্মিক আবিষ্কারের গল্প ডঃ রুবিনা জামান

0 Response to "বিজ্ঞানীর জীবনী থেকে "অ্যালবার্ট আইনষ্টাইন" পর্ব ১"
Post a Comment