আমরাত জানতাম শুধু মানুষ আর কিছু পশু পাখিই মাংসখেয়ে থাকে । তাছাড়া কিছু পশু পাখি আছে যারা মাংসাসী যারা বেচে থাকার জন্য শুধু মাংস খেয়ে থাকে । মাংসাসী গাছ কিংবা উদ্ভিতের কথা শুনেছেন কখনো । ছোটবেলায় গল্প শুনতাম আফ্রিকার জঙ্গলে ভয়ঙ্কর মানুষ-খেকো গাছ আছে। বটগাছের মতো সেই গাছগুলোর বড় বড় লেজের মতো কাণ্ড আছে, যেগুলো দ্বারা তারা মানুষকে পেঁচিয়ে আটকে খেয়ে ফেলে! আমার মতো অনেকেই নিশ্চয় ছোটবেলায় মানুষ-খেকো গাছের গল্প শুনেছেন। সত্যিকার অর্থে এমন কোন গাছের সন্ধান না পাওয়া গেলেও এমন কিছুছোট ছোট গাছ ও উদ্ভিদের সন্ধান পাওয়া গেছে যারা সত্যি যারা ভিবিন্ন ধরনের পোকা মাকড় এবং ছোট ছোট প্রানিও খেয়ে নেয়।
আসুন জেনে নিই এমন কিছু উদ্ভিদের সম্পর্কে।
আসুন জেনে নিই এমন কিছু উদ্ভিদের সম্পর্কে।
নেপেন্থেস
এ উদ্ভিদের পাতাগুলো জন্মানোর সময় সাধারণ পাতার মতো দেখা গেলেও যখন এরা বড় হতে থাকে তখন পাতাগুলো কুন্ডলী পাকিয়ে কলসের আকৃতি ধারণ করে। এর প্রবেশপথ পাতার ডগা দিয়ে এমনভাবে ঢাকা থাকে যে এটা ঢাকনার কাজ করে। এই কলসের আকৃতির পাতার মধ্যে একধরণের জারক রস থাকে। এ জাতীয় উদ্ভিদ তার উজ্জল ফুল ও পাতা এবং মধু দ্বারা পোকামাকড়দের আকৃষ্ট করে। একবার যদি কোন পোকা এই ফাঁদে পা দিয়ে কলসের মধ্যে পরে যায়, তাহলে আর সেখান থেকে উঠতে পারে না। কারণ এই কলসির আকৃতির পাতাগুলোর ভেতরের দিকে মোমের মত পাতলা, পিচ্ছিল একটা আবরণ থাকে যা পোকাগুলোকে উপরে উঠতে বাধা দেয়। ভিতরের জারক রসের মধ্যে পরে গেলে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই পোকাগুলো সেখানে দ্রবীভূত হয়ে যায় এবং গাছের খাদ্যে পরিণত হয়।
ড্রোসেরা
ড্রোসেরা জাতীয় উদ্ভিদের শিকারের পদ্ধতিকে সক্রিয় ‘ফ্লাইপেপার ট্রাপ’ বলে। এ পদ্ধতিতে উদ্ভিদগুলো নিজেদের শরীরের চিটচিটে আঠালো একধরণের পদার্থের সাহায্যে পোকামাকড়কে ফাঁদে ফেলে। ড্রোসেরার সরু উপাঙ্গের ন্যায় পাতায় ডগায় একধরণের আঠালো লালাগ্রন্থি শিশিরবিন্দুর ন্যায় জমে থাকে। এর আশেপাশে কোন পোকামাকড় এলে এর পাতাগুলো সেই দিকে খুব দ্রুত প্রসারিত হয় এবং পোকাগুলোকে লালাগ্রন্থির সাথে আটকে ফেলে। একবার পোকাগুলোকে ফাঁদে আটকে ফেলতে পারলে খুব সহজেই খাবারে পরিণত করে। এ উদ্ভিদের আদি বাস দক্ষিণ আফ্রিকায়। এর প্রায় ২০০ টি প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।
ভেনাস ফ্লাইট্রাপ
ভেনাস ফ্লাইট্রাপ “স্নাপ ট্রাপ” পদ্ধতিতে শিকারকে ফাঁদে ফেলে। অর্থাৎ এ ধরণের উদ্ভিদের পাতার সংবেদনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে শিকারকে আটকে ফেলে এবং খাদ্যে পরিণত করে।এর পাতার দুইভাগের মাঝখানে যে শিরা থাকে তার সাহায্যে পাতাগুলো দ্রুত খুলতে ও বন্ধ হতে পারে। পাতার ভিতরের দিকের পৃষ্ঠে এবং প্রান্ত জুড়ে ছোট ছোট কাঁটার মতো সংবেদনশীল লোম থাকে। পোকামাকড় বা এই জাতীয় কোনো শিকার এসব লোমের সংস্পর্শে আসা মাত্র অতি দ্রুততার সাথে শিকারসহ পাতার মুখ বন্ধ হয়ে যায়। পোকাগুলো পাতার মধ্যে আটকে গেলে এর ভেতরের জারক রস ধীরে ধীরে পোকার নরম অংশগুলোকে গলিয়ে খাদ্যে পরিণত করে। পাতাগুলোর মধ্যে যদি খুব ছোট পোকা আটকে তবে পাতার মুখ বন্ধ হয় না। কারণ সেগুলো পর্যাপ্ত খাবারের যোগান দিতে পারে না। আবার পোকা ছাড়া অন্যকিছু, যেমন- ছোট পাথর বা অন্য কিছু তবে বার ঘন্টার মধ্যে ট্রাপটি পুনরায় খুলে যায় এবং সেটাকে বের করে দেয়।ভেনাস ফ্লাইট্রাপের অনন্য সৌন্দর্যের কারণে এ উদ্ভিদ অনেকে বাড়ির টবেও চাষ করে।
ইউট্রিকুলারিয়া
এ উদ্ভিদ যে পদ্ধতিতে শিকার করে তাকে বলে “ব্লাডার ট্রাপ”। এ কারণে ইউট্রিকুলেরিয়াকে ব্লাডারওয়ার্ট ও বলা হয়ে থাকে। এর দেহের সাথে ব্লাডার বা থলির মত গঠনবিশিষ্ট ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফাঁদ থাকে। এই ফাঁদের মুখে থাকে সংবেদনশীল ছোট ছোট লোম। লোমের সংস্পর্শে কোন পোকামাকড় আসলে ব্লাডারের মুখ খুলে যায় এবং চোখের নিমিষেই শিকারকে এর ভেতরে টেনে নেয়। ফাঁদের ভেতরের লোম থেকে বের হয় এক ধরণের জারক রস যা শিকারকে খাদ্যে পরিণত করে।
ডারলিংটোনিয়া
এটিও কলস উদ্ভিদ বা পিচার প্লান্টের একটি প্রজাতি। কলস উদ্ভিদের অন্যান্য প্রজাতির (যেমন-নেপেন্থিস) মতো ডারলিংটোনিয়াও পিটফল ট্রাপ পদ্ধতিতে শিকারকে ফাঁদে ফেলে। তবে অন্যান্য কলস উদ্ভিদের মতো এটি এর কলসের মতো পাতার মধ্যে বৃষ্টির পানি জমতে দেয় না। এটা এর কলসের পানির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কলসে জমে যাওয়া অতিরিক্ত পানি এটি এর মূলের সাহায্যে পাম্প করে বের করে দেয়।সর্বপ্রথম ক্যালিফোর্নিয়াতে এর সন্ধান পাওয়া যায় বলে একে ডারলিংটোনিয়া ক্যালিফোর্নিকা বা ক্যালিফোর্নিয়া পিচার প্লান্টও বলা হয়ে থাকে। আবার এ উদ্ভিদের নলাকৃতি পাতাগুলোকে ফণাধারী সাপের মত দেখা যায় বলে একে কোবরা লিলি নামেও ডাকা হয়।






0 Response to "মাংস খেকো উদ্ভিদের কথা । মাংস খেয়ে বেচে থাকে এমন কিছু উদ্ভিত "
Post a Comment